প্রকাশিত: Tue, Feb 14, 2023 4:29 PM
আপডেট: Fri, Jun 27, 2025 2:10 AM

মিডিয়া ওয়াচ

রাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে এই শোরগোল কেন?

আরশাদ মাহমুদ : বিষয়টি নিয়ে আমি সপ্তাহখানেক আগে একটা লম্বা লেখা লিখেছি। যারা পড়েননি তাদের জন্য জানাচ্ছি যে সেটার মূল বক্তব্য ছিল দেশে কে রাষ্ট্রপতি হবেনÑ এটা নিয়ে সাধারণ মানুষের কোনো মাথা ব্যাথা নেই। আমার নিজেরও নেই। কারণ শুধু রাষ্ট্রপতি এবং তার পরিবারবর্গ ছাড়া এখানে অন্য কোনো বেনিফিশিয়ারি নেই। এরপরও দেখতে পাচ্ছি দু’দিন আগে শাহাবুদ্দিন চুপপু একমাত্র পধহফরফধঃব হিসেবে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়েছেন। এবং এ দেশে যেহেতু এক ব্যক্তির ইচ্ছা-অনিচ্ছাই সবকিছু নির্ধারণ করে সেখানে রাষ্ট্রপতি কে হবেন তা নিয়ে এতো আলোচনা বা ংঢ়বপঁষধঃরড়হ এর কী অর্থ সেটা আমার কাছে বোধগম্য নয়। কিন্তু প্রায় দু’মাস ধরে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম এবং টেলিভিশনগুলো সম্ভাব্য রাষ্ট্রপতির তালিকায় কারা আছেন এ নিয়ে বিভিন্ন খবর এবং টকশো করে সবাইকে ব্যস্ত রেখেছে।

কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে এরা এগুলো কেন করলো? উত্তরটা খুবই সহজ। কারণ এই দালাল এবং অর্ধশিক্ষিত সাংবাদিক, সম্পাদক এবং আলোচকরা দেশের মূল সমস্যা থেকে জনগণের চোখ অন্যদিকে ফিরিয়ে তাদের ব্যস্ত রাখতে চেয়েছে। যেমনটা আগেই উল্লেখ করেছি রাষ্ট্রপতি কে হবেন সেটা যিনি নির্ধারণ করবেন তার সঙ্গে আমার গত ১৬ বছরে দেখা হয়নি এবং এ ব্যাপারে তিনি আমার সঙ্গে কোন আলোচনাই করেননি। এখন এটা পরিষ্কার যে তিনি কারো সঙ্গে এ ব্যাপারে কথা বলেননি। 

আশ্চর্যের বিষয় সংবাদমাধ্যমগুলো এমনভাবে খবর প্রচার করেছে যে মনে হচ্ছিল যে শেখ হাসিনা প্রতি ঘণ্টায় ঘণ্টায় বা মিনিটে মিনিটে তাদের সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনা করছেন এবং তার ভিত্তিতে তারা একটা নামের তালিকা প্রকাশ করেছেন বা করছেন। এদের মধ্যে ২-৩ জনের নাম এমনভাবে প্রচার করা হলো যে সবাই ধরে নিয়েছেন এদের একজনই হবেন দেশের পরবর্তী রাষ্ট্রপতি। উল্লেখ্য দু’জনের নাম সবচেয়ে বেশি আলোচিত হয়েছে তারা হলেন বর্তমান স্পিকার শিরিন শারমিন চৌধুরী এবং প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা মশিউর রহমান। ইতিমধ্যে আপনারা জেনেছেন যে তারা কেউই শেষ পর্যন্ত বঙ্গভবনের বাসিন্দা হতে পারছেন না। আমার ব্যক্তিগত ধারণা এই তথাকথিত সাংবাদিকরা একটি মহলের প্ররোচনায় এইসব নাম দিনের পর দিন লিখে গেছেন বা টেলিভিশনে বলেছেন। নিন্দুকরা বলে যে খুব সম্ভবত তারা টাকার বিনিময় এই কাজগুলো করেছে। সাংবাদিকদের যে বদনাম এখন সর্বব্যাপী ব্যাপারটা অনেকের কাছেই বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়েছে। আমার প্রশ্ন হলো এসব সাংবাদিক এবং তাদের সম্পাদকরা এখন কীভাবে মুখ দেখাবেন।

অবশ্য তাদের যেকোনো আত্মমর্যাদা বা বিশ্বাসযোগ্যতা নেইÑ এটা কারোরই অজানা নয়। অন্য যেকোনো দেশ যেখানে সাংবাদিকদের কিছুটা আত্মমর্যাদা বোধ আছে তারা হয়তো এই ঘটনার পর পদত্যাগ করতেন অথবা তাদের চাকরি থেকে বের করে দেওয়া হতো। এবার রাষ্ট্রপতি নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে দু’একটি কথা। আপনারা ইতিমধ্যেই দেখেছেন যে কোনো নির্বাচনের আগে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ তাদের সংসদীয় দলের একটা বৈঠক ডাকেন গণভবনে এবং সেখানে প্রার্থী কে হবেন বা প্রার্থীগণ কে হবেন সেটা চূড়ান্ত করা হয়। কিন্তু গত প্রায় ১৪ বছর থেকে একটা অদ্ভুত ব্যাপার লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সেটা হলো ওবায়দুল কাদের সাহেব বৈঠক থেকে বেরিয়ে টিভি ক্যামেরার সামনে সাংবাদিকদের বলেন যে বৈঠকে আমরা দলের সভানেত্রীর উপর সম্পূর্ণ দায়িত্ব দিয়েছি এবং তিনিই নির্ধারণ করবেন কে প্রার্থী হবেন। এবারও তার ব্যতিক্রম ছিল না। ওবায়দুল কাদের বা অন্য নেতারা যে এই প্রক্রিয়াতে কোনো ভূমিকা রাখেননি সেটা সম্ভবত কারো অজানা নেই। আমার মনে প্রশ্ন জাগে যেহেতু এক ব্যক্তি সবকিছু নির্ধারণ করেন তখন এই নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে যে নাটক বা প্রহসন হয় সেটার প্রয়োজনটা কী? এগুলো না করে যদি প্রথমেই সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী বলে দেন যে কে বা কারা তার পছন্দের ব্যক্তি, তাহলে রাষ্ট্রের একটা বিরাট অংকের খরচ এবং সময় বেঁচে যায়। লেখক: সাংবাদিক। ফেসবুক থেকে